Wednesday, February 5, 2014

ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার ৪ কারণ



ঢাকা: বর্তমান যুগে ফেসবুক প্রত্যেকের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিন অন্তত একবার করে ফেসবুক না দেখলে যেন চলেই না। আবার অনেকে তো প্রতি মুহূর্তেই মোবাইল ও বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুকে থাকছেন। অর্থাৎ প্রতিদিনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে ফেসবুক। তারচেয়েও বড় ব্যাপার হলো, ফেসবুকে ব্যক্তিগত অনেক তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এছাড়াও আপনার ফেসবুকের নিরাপত্তা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, কেউ তা হাতে পেয়ে গেলে এর মাধ্যমে কেবল আপনার সম্পর্কে তথ্য চুরিই নয়, বরং আপনার চিত্রটাকেই সবার সামনে নষ্ট করে ফেলতে পারে।

ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন, কজ এবং বিজ্ঞাপন
ফেসবুকের অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশনের অধিকাংশই নিরাপদ নয়। কিছুদিন আগে ফার্মভিলের মতো সর্বাধিক জনপ্রিয় কিছু অ্যাপ্লিকেশন ও গেমও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে স্বীকার করেছে যে, তারা বিজ্ঞাপনের স্বার্থে তাদের ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও অসংখ্যা অ্যাপ্লিকেশনের ভাণ্ডারে হঠাৎই হয়তো এমন কোনো অ্যাপ্লিকেশন থেকে আপনাকে রিকোয়েস্ট বা ইনভাইট পাঠানো হলো যেটা পাসওয়ার্ড চুরি করে। কিন্তু আপনি তা কখনোই ধরতে পারবেন না।

আসল কথা হলো, এসব অজানা-অচেনা কজ, অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি থেকে যত দূরে থাকা যায় ততোই ভালো। অন্যথায় এসবের মাধ্যমে আপনার পাসওয়ার্ড বা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যাদি হ্যাকারদের হাতে পড়লে আপনার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণই চলে যেতে পারে।

ফেসবুক ই-মেইল ফিশিং
একটু অসতর্ক হলেই ই-মেইলের মাধ্যমেও ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চুরির শিকার হতে পারেন। অনেক চতুর হ্যাকাররা ঠিক ফেসবুক নোটিফিকেশনের মতো করে ই-মেইল তৈরি করে এবং তা ফেসবুকের মতোই কাছাকাছি কোনো ডোমেইন থেকে ই-মেইল আকারে পাঠায়। এসব ই-মেইলে থাকা লিংকগুলো ক্লিক করলে যে সাইটটি ওপেন হবে সেটাও অবিকল ফেসবুকের মতোই হবে। কিন্তু মূলত এটি ফিশিং সাইট।

এর ফলে, আপনার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড নিশ্চিন্তে হ্যাকার মশাইরা পেয়ে যাচ্ছে। এসব আক্রমণ থেকে বাঁচতে সবসময় ই-মেইলের লিংকে ক্লিক করার আগে দেখে নেয়া উচিৎ তা facebook.com ঠিকানাতেই যাচ্ছে কি না। কারণ, যতো যাই হোক। ফেসবুকের ঠিকানা ঠিক থাকলে লগইন করতে আর কোনো ঝামেলা নেই।

ফেসবুক শেয়ার বাটন
থার্ড পার্টি সাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট যেমন- পোস্ট, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি ফেসবুকে শেয়ার করার জন্য শেয়ার বাটন যুক্ত করা থাকে। মূলত ব্যবহারকারীর সুবিধার্থেই এই ফেসবুক শেয়ার বাটনগুলো যুক্ত করা হয়। কিন্তু এই শেয়ার বাটনও আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চুরির কারণ হতে পারে।

অনেক হ্যাকাররা তাদের সাইটে শেয়ার বাটন নিজেরা যোগ করে এবং সেখানে ক্লিক করলে যেই সাইট ওপেন হয়, সেটা ফেসবুকের মতো দেখতে হলেও তা আসলে ফিশিং সাইট। আপনি ফেসবুক মনে করে লগইন করার চেষ্টা করতে গেলেই আপনার পাসওয়ার্ড চলে যাবে তাদের হাতে। এক্ষেত্রেও আপনি যদি সতর্ক থাকেন তাহলে ফিশিং সাইট এড়াতে পারবেন। কেবল খেয়াল রাখবেন যেই লিংকে ক্লিক করছেন, তা facebook.com কি না।

পাবলিক কম্পিউটারে লগইন
সাইবার ক্যাফে বা এ জাতীয় পাবলিক কম্পিউটারে লগইন করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। সাইবার ক্যাফে থেকে লগইন করার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে কি-লগার। অনেক সফটওয়্যার আছে যেগুলো কম্পিউটারে থাকলে আপনি ব্রাউজিং করার সময় ব্যবহৃত সব পাসওয়ার্ড সেইভ করে ফেলে। তবে ফায়ারফক্স বা ক্রোম ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি থাকে না বলেই জানা গেছে।

তবে আরেকটি সাধারণ ভুল অনেকেই করেন তাহলো remember me/keep me logged in বক্সে টিক দিয়ে লগইন করেন। অথবা পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করার অনুমতি চাইলে অনেকে না বুঝেই বা তাড়াহুড়োয় সেভ করে ফেলেন। এতে করে আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চুরি না হলেও আপনার অ্যকাউন্টে অন্য কেউ অ্যাক্সেস পেয়ে যাচ্ছে যা সমানভাবেই ক্ষতিকর।

আমাদের সবারই উচিৎ কেবল ফেসবুকই নয়, বরং ই-মেইলসহ যাবতীয় সব পাসওয়ার্ড নিরাপদ রাখার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া এবং বিশেষ করে কোনো সাইটে লগইন করার আগে বা পাসওয়ার্ড দেয়ার আগে এবং ই-মেইলে আসা লিংকে ক্লিক করার আগে নিশ্চিত হয়ে নেয়া যে ই-মেইলটি বা ওয়েবসাইটটি ফিশিং সাইট নয়। তাহলে ফেসবুকসহ যাবতীয় সব পাসওয়ার্ড নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।

Thursday, January 16, 2014

বাংলাদেশ নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে তুমুল বিতর্ক : প্রশ্নবৃদ্ধ নির্বাচন সমালোচনায় সরকার



ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে বৃটিশ পার্লামেন্টে। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী এই বিতর্কে অংশ নেন পার্লামেন্টের সকল দলের এমপিরা। সকাল সাড়ে ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া পার্লামেন্টে দিনের প্রথম অধিবেশনেই স্থান পায় বাংলাদেশ ইস্যু। দুপুর দেড়টায় বির্তক শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে। বাংলাদেশ নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে এতো দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক বৃটেনের ইতিহাসে এই প্রথম। পার্লামেন্টের ডেপুটি ¯িপকার লিনসে হয়েল এর সভাপতিত্বে শুরুতে বির্তকের সূচনা করেন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এ্যান মেইন এমপি। এর পরেই একে একে বক্তব্যে অংশ নেন পার্লামেন্টে উপস্থিত বাকী সদস্যরা।
বৃটিশ এমপিরা তাদের বক্তব্যে বলেন , বাংলাদেশ বৃটেনের একটি অনত্যম গুরুত্বপূর্ন উন্নয়ন সহযোগী। বৃটেন থেকে প্রতিবছর ২ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ সহায়তা পায় বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাস্ট্র দেখতে চায় বৃটেন। বৃটিশ এমপিরা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ আজ দ্বিধা বিভক্ত। দেশে বর্তমানে যা ঘটছে তা কোনভাবেই গ্রহযোগ্য নয়। শেখ হাসিরার সরকার যেভাবে দেশ চালাচেছন তাতে দেশে বিরোধী দল আছে বলে মনে হচেছনা। এমন অবস্থায় আর্ন্তজাতিক মহলের দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বৃটিশ সরকারকে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বৃটিশ এমপিরা বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে নানা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপিদের আলোচনায় উঠে আসে, দেশের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, বিরোধী দলের ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া, মানবাধিকার লঙ্গন ইস্যুসহ আইন শৃক্সখলা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে মানুষ হত্যার মতো গুরুতর এসব অভিযোগগুলো। এছাড়াও আলোচনায় স্থান পাায় নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক এম ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতাদের গুমের ঘটনা ও জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি করার অধিকার নিয়ে।
পার্লামেন্ট আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে বৃটিশ ফরেন অফিস মিনিস্টার ডেভিড লিজিংটন, বাংলাদেশে পূনরায় একটি স্বচচছ ও নিরপেক্ষ নিবার্চন দাবী করে সরকারকে দ্রুত পদেক্ষপ নিতে আহবান জানান। সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসার পাশাপাশি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের প্রশংসা করেন লিজিংটন।
শ্যাডো ফরেন অফিস মিনিস্টার ক্যারি ম্যাকার্থি, বাংলাদেশ সরকারকে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস অর্জন করা এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার তবে এটি কতটুকু স্বচছ ও নিরোপেক্ষ হচেছ তা দেখার অধিকার আছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিব পার্টির এমপি রিচার্ড ফুলার, লেবার পার্টির এমপি গ্যাবিন সুকার, কনজারভেটিব পার্টির এমপি নেইল পারিস, লেবার পার্টির প্রবীন নেতা জেরিমি করভিন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি জন হেমিং, জিম ফিজপ্রেট্রিক এমপি,বাঙালী এমপি রোশনারা আলী ও কনজারভেটিভ পার্টির এমপি বব বেকম্যান, রহমান চিশতী এমপি, নিক ডি ভয়েস এমপি, জনাথন আসরথ এমপি,
লিবডেম এমপি মার্টিন হরউডসহ বেশ কয়েকজন এমপি।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির রিচার্ড ফুলার বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো খুবই গুরুতর। বিরোধীদলহীণ প্রশ্নবৃদ্ধ জাতীয় নির্বাচন, বিনা বিচারের হত্যা ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্গিত হচেছ বাংলাদেশে। রেপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) বাংলাদেশের ৬০০ মানুুষকে এ পর্যন্ত হত্যা করেছে উল্লেখ করে সরকারদলীয় এই এমপি এক পর্যায়ে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুমের ইস্যুটিও উখতাপন করেন বৃটিশ পার্লামেন্টে। তিনি বিশ্বনাথ ভ্রমনের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের এমন একজন মেধাবী নেতা নিখোঁজ হওয়ার পরও সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি হকের পদত্যাগ উল্লেখ করে, এই সংস্থাটির নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেন। বৃটেন সকল ধরনের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে কাদের মুল্লার মৃত্যুদন্ডকে ভূল সিদ্ধান্ত হিসেবে মন্তব্য করেন।
লেবার পার্টির প্রবীন নেতা জেরিমি করভিন, বাংলাদেশে মিডিয়ার উপর সরকারী দমন পীড়নের কথা উল্লেক করে বলেন, দেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরী। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে বলেন, একটি দেশে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন না হলে বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠে। তিনি সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা আহবান জানান।
লেবার পার্টির এমপি গ্যাবিন সুকার বলেন, বাংলাদেশের দশম নির্বাচন যেভাবে স¤পন্ন হলো এটাকে কোন নির্বাচন বলা যাবেনা। যেখানে মাত্র ৪ থেকে ৫টি নির্বাচন পরিদর্শক ছাড়া জাতিসংঘ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের কোন পরিদর্শক নির্বাচন পরিদর্শন করেনি। তাতে প্রতিয়মান হয় বাংলাদেশে কোন সুস্টু ও গ্রহন যোগ্য নির্বাচন হয়নি। তাই অবিলম্বে নতুন নির্বাচন জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পার্লামেন্টে বাঙালী এমপি রোশনারা আলী, বাংলাদেশে গত ফেব্র“য়ারী মাস থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতদের জন্য দু:খ প্রকাশ করে বলেন , আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ সব সময়ই চিন্তিত থাকেন দেশে ফেলে আসা তাদের স্বজনদের ব্যাপারে। তিনি বলেন, দেশে একটি স্বচছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বড়ো দলগুলো অতীতে ব্যর্থ হয়েছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন স্বচছ হয়নি উল্লেক করে তিনি দেশের সহিংসতা বন্ধ এবং বিরোধী দলের গনতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধাঁ না দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপি বব বেকম্যান বলেন, জামায়াতে ইসলামির প্রসংঙ্গ টেনে বলেন, জামায়াত কোন সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিশ্বের কোন সংস্থা এখন পর্যন্ত চিহিত করতে পারেনি। দেশের বিগত নির্বাচনেও তারা অংশ নিয়ে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে পার্লামেন্টে। বাংলাদেশের ৪-৫% জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে এই সংগঠনটি। অথচ সরকার তাদেরকে ভোটের অধিকার হরন করেছে। তাদের নির্বাচনের বাহিরে রেখেছে। তিনি বলেন জামায়াত যদি বাংলাদেশের রাজনীতি করতে না পারে তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। যা বাংলাদেশের সুস্থ রাজনীতির জন্য কোনভাবেই কল্যানকর হবেনা। তিনি এ সময় বাংলাদেশের তত্তবধায়ক সরকার জরুরী বলে উল্লেখ করেন।
কনজারভেটিভ পাটির এমপি নেইল পারিস বলেন, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী দুজনই দুজনের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করেন। যা দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে প্রভাব পড়ছে। এটা একটি দেশে গনতান্ত্রিক উত্তরনে কোনভাবেই কাম্য নয়

Monday, January 13, 2014

কোন দল বা মতকে নির্মূল করতে চাওয়াটাই ফ্যাসিবাদী মানসিকতা : মাহফুজউল্লাহ



‘কোন দল বা মতকে নির্মূল করতে চাওয়াটাই ফ্যাসিবাদী মানসিকতা’- শনিবার দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ একথা বলেন।

সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জামায়াতকে নির্মূল করার কথা বললে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ এ মন্তব্য করেন। মাহফুজউল্লাহ একথা বলার সাথে সাথে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে মাহফুজউল্লাহ প্রতিবাদ করে বলেন, এটাই ফ্যাসিবাদ; আপনার বক্তব্যের সময় তো আমি কোন কথা বলিনি।

মাহফুজউল্লাহ আরো বলেন, একটা দল বা জনগোষ্টিকে আপনি কিভাবে নির্মূল করবেন? ক্যাডার সিস্টেমটা তাদের সাংগঠনিক কাঠামো।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যশোর, পাবনা, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে বিএনপি-জামায়াত নয়, বরং আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততাই দেখা গেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের বক্তব্যেও সেরকম কথা উঠে এসেছে।

http://dailynayadiganta.com/index.php

কোন দল বা মতকে নির্মূল করতে চাওয়াটাই ফ্যাসিবাদী মানসিকতা : মাহফুজউল্লাহ



‘কোন দল বা মতকে নির্মূল করতে চাওয়াটাই ফ্যাসিবাদী মানসিকতা’- শনিবার দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ একথা বলেন।

সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জামায়াতকে নির্মূল করার কথা বললে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ এ মন্তব্য করেন। মাহফুজউল্লাহ একথা বলার সাথে সাথে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে মাহফুজউল্লাহ প্রতিবাদ করে বলেন, এটাই ফ্যাসিবাদ; আপনার বক্তব্যের সময় তো আমি কোন কথা বলিনি।

মাহফুজউল্লাহ আরো বলেন, একটা দল বা জনগোষ্টিকে আপনি কিভাবে নির্মূল করবেন? ক্যাডার সিস্টেমটা তাদের সাংগঠনিক কাঠামো।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যশোর, পাবনা, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে বিএনপি-জামায়াত নয়, বরং আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততাই দেখা গেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের বক্তব্যেও সেরকম কথা উঠে এসেছে।

http://dailynayadiganta.com/index.php

Friday, January 10, 2014

বিপজ্জনক রশিতে হাসিনা হাঁটছেন, মেজর ডালিম


শেখ হাসিনার বন্ধুরা কি তাকে পরিত্যাগ করছেন? এই প্রশ্ন আওয়ামী লীগের এবং শেখ হাসিনার নিজেরও বটে। হাসিনার পারিবারিক ধারাবাহিকতা ভারতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য, যেমন কিনা পারিবারিক অন্য সব বিষয়াদিও তারই হস্তগত শক্তভাবেই। কিন্তু ভিজে সাবান যেমন হাত থেকে পিছলে যায় তেমনি তার হাত থেকে সবই যেন ফসকে যাচ্ছে।

তার প্রতি বিরূপ হবার জন্য শুধুমাত্র ভারতকে দোষ দেয়া যায় না। তার নিজের দোষও এ ব্যাপারে কম নয়; বরং অনেক বেশী হাসিনা। তার মদদ দাতারা যেমন আশা করেছিল উত্তরাধিকার ধারাবাহিকতায় স্বার্থ রক্ষা করবে তা হয়নি। সজীব ওয়াজেদ জয় এমন কোন করিৎকর্মা গুণ দেখাতে পারেনি যাতে সে প্রমাণ করতে পেরেছে যে সে অনেক কাজের মানুষ। বরং সে আমেরিকায় এমন জীবন ধারন ও চলনবলন করেছে যার ফলে তাকে এমন কি জেলে পর্যন্ত থাকতে হয়েছে ওদেশের আইন ভঙ্গকারী উচ্ছৃংখল ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে। পারিবারিক ঝগড়াঝাটিও জয়ের চরিত্রকে কলুষিত করেছে। জয়কে নিয়ে শেখ রেহানার যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে সে আদৌ যথার্থ উত্তরাধিকারী হতে পারে কি না। হাসিনার মদদদাতা মুরুব্বীরাও জয়কে পছন্দ করছে না বরং গভীরভাবে অপছন্দ করছে। ১৯৭৫-৮১ সময়কালে হাসিনা যখন দিল্লীতে ‘র’ এর একটি বাড়ীতে বসন্ত বাহার এ থাকতেন তখন একজন শিখ মেয়ের সাথে কিশোর জয়ের ভালবাসা লেনদেন হয় (হয়ত লাগিয়ে দেয়া)। সে মেয়েটি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে অস্বীকার করলে সে বিয়ে আর হয়নি। কেউ কেউ বলেন যে, সেই শিখ মেয়েটি মুসলমান হয়ে জয়কে বিয়ে করতে রাজী হয়নি এজন্য যে জয় ভবিষ্যতে মায়ের বা পরিবারের পথ ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করতে পারবে না। তাছাড়াও ২০০৭ সালে হাসিনার নির্বাচনে জিতবার সম্ভাবনাও যে ক্ষীণ ছিল তাও তার বন্ধুদের বিরূপ হওয়ার একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে। এ কারণেই তারা বাংলাদেশে আর একটি রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পিত ও অঢেল অর্থ ব্যয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম গ্রহন করেছিল।

সময়মত নির্বাচন অনুষ্ঠান ওরা অসম্ভব করেছিল। হিটলার এবং কমিউনিষ্ট স্ট্যালিন তাদের কবরে শুয়ে থেকে নিশ্চিতভাবেই অস্বস্তি বোধ করেছিলেন এজন্য যে, তারাও বাংলাদেশের এই হাসিনার রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার কাছে হেরে যাচ্ছিল।

একটু ভিন্নভাবে তাকালে সংক্ষেপে বলা যায় যে, বাংলাদেশ যেন এই খেলায় পূর্ণভাবে হেরে যাচ্ছিল। এমন শাসনতান্ত্রিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল যে, যে শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বহু কষ্টে নির্মিত হয়েছিল, তা নিঃশেষ হতে চলেছিল। জানামতে বাংলাদেশের বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল; পোষাক শিল্পে কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক অর্ডার বাতিল হয়েছিল, আন্দাজ করুন কে সেসব অর্ডার হাইজ্যাক করেছিল? বাংলাদেশের সেই ‘দয়ালু প্রতিবেশী’ ছাড়া অন্য আর কেউ কি? বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ভয়ে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল এবং অব্যাহত ধর্মঘট অবরোধ অর্থনীতির প্রতিটি সেক্টরে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

পরিশেষে এবং খুবই জরুরী বিষয় ছিল এই যে, অসংখ্য নিরীহ মানুষের জীবননাশ হয়েছিল-কোন বড় কাজে নয়, অনেকের বাড়ীঘর ধ্বংস করা হয়েছিল, বাংলার মানুষের গরীবরাই বরং বেশী করে ধ্বংস হয়েছিল।

হাসিনার দুঃখের কথায় ফিরে আসলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, হাসিনা যখন সরকারে অথবা বিরোধী আসনে বসে থেকে তার বিদেশী মদদ দাতাদের সাহায্যাদি পেয়েছিলেন, তারা এখন তার থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের অসন্তোষজনক অবস্থানে হাসিনাকে যদি দ্বিতীয় সারির নেতা হিসেবে সংসদে বসে থেকে অন্যদের বক্তব্য শুনতে হয়, অথবা চিরতরে তার নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত রুদ্ধ হয়, তাতে বোধ করি অবাক হবার কিছু থাকবে না।

আ.লীগকে স্বৈরাচারদের ভাগ্য বরণ করতে হবে: ফখরুল


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ না করলে আওয়ামী লীগকে অতীতের স্বৈরাচারদের মতোই ভাগ্য বরণ করতে হবে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ জানুয়ারির অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে রেখে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও অপকৌশল দ্বারা চলমান গণ-আন্দোলনকে কোনোভাবেই কলুষিত করে স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি অভিযোগ করেন, প্রহসনের নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিরোধী দল নিধনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা দেশকে ক্রমান্বয়ে এক চরম নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সরকারদলীয় গুন্ডারা’ সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে তার দায়ভার বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে।

যৌথবাহিনী এবং তাদের সহায়তায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

বিবৃতিতে সংখ্যালঘুদের ওপর অমানবিক ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থেকে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত সব কর্মসূচি চালিয়ে যেতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

‘সংবিধান রক্ষায়’ সংবিধানবিচ্যুত শপথ



ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই দেশ শাসন করেছিলেন ১৬৪৩ থেকে ৭২ বছরের বেশি। ‘আমিই রাষ্ট্র’ কথাটি তাঁর জবানিতেই পরিচিত। অপ্রয়োজনে সংবিধান থেকে সরে আজই শপথ এবং ১২ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার গঠনের প্রশ্নবিদ্ধ উদ্যোগ দেখে লুইয়ের কয়েকটি উদ্ধৃতি স্মরণে আসছে। লুই বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে জয় করতে পারে, তার সামনে আর সামান্যই কিছু টিকতে পারে।’ অবশ্য তিনি তাঁর অন্তিম শয়ানে বলেছিলেন, ‘আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু রাষ্ট্র সর্বদাই টিকে থাকবে।’
রকিব উদ্দীন কমিশন গতকাল গেজেট করে যা করল, তাতে মনে হয় তাঁরা লুইয়ের সপ্তদশ শতাব্দীর রাজকর্মচারী। তাঁরা লুইয়ের মনোবাঞ্ছা পূরণ করছেন। লুই বলতেন, ‘এটা আইনসম্মত, কারণ এটাই আমার অভিপ্রায়।’ এখন সরকার সংসদ ভাঙছে না অথচ ইসিকে দিয়ে সংবিধান ভাঙাচ্ছে। সরকারি মন্ত্রণাদাতারা ও তাদের তথাকথিত শুভানুধ্যায়ীরা উদ্ভট ও অসাংবিধানিক মন্ত্রণা দিচ্ছেন। তাঁরা নাকি বলছেন, নবম সংসদ ভাঙতে হবে না। শপথ নিলে এবং দশম সংসদ ডাকলেই নবম সংসদ বিলুপ্ত হবে। অথচ সংবিধান বলেছে, শুধু দুভাবে সংসদ লুপ্ত হবে। প্রথমত প্রধানমন্ত্রীর লিখিত পরামর্শে রাষ্ট্রপতির আদেশে। দ্বিতীয়ত প্রথম বৈঠক থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরা হলে। এটা পুরা হবে ২৪ জানুয়ারি। এই তারিখ এলেই তবে সংসদ আপনাআপনি ভাঙবে। কাউকে ভাঙতে হবে না। এখন নাকি সিদ্ধান্ত হয়েছে, সংসদ ভাঙতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেওয়া হবে না। ২৪ জানুয়ারির জন্য অপেক্ষাও করা হবে না। তালি বাজিয়ে নবম সংসদ উধাও করে দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রত্যেক নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়েছিলেন, আমি সংবিধানের রক্ষণ ও সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করব। আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে আমার পদের কর্তব্য পালন করব এবং আমার সরকারি কার্য ও সরকারি সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেব না।
গতকাল নতুন নির্বাচনের ফলাফল সরকারি বিজ্ঞপ্তি দ্বারা প্রকাশ করে ইসি সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন দফার শর্ত নির্দিষ্টভাবে লঙ্ঘন করল। স্পিকার শপথ পড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে তাঁর শপথও লঙ্ঘন করলেন। এরপর বাকি থাকবেন রাষ্ট্রপতি।
১২৩ অনুচ্ছেদের বিধান নিম্নরূপ: ‘(৩) সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ-সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ দশম সংসদ নির্বাচন ওই (ক) উপদফা মতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং সংবিধান বলেছে, ‘নির্বাচিত ব্যক্তিগণ’ আগামী ২৪ জানুয়ারি অর্থাৎ ‘মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ-সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।’ কিন্তু শপথ নিয়ে আজই তাঁরা কার্যভার গ্রহণ করছেন।
সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ২(ক) দফায় শপথের বিধান আছে। তাই ১২৩ ও ১৪৮ অনুচ্ছেদ মিলিয়ে পড়তে হবে। ১৪৮(২ক) বলেছে, ‘১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে’ শপথ পড়াতে হবে। এই অনুচ্ছেদেরই ৩ উপদফা বলেছে, শপথ মাত্রই কার্যভার গ্রহণ।
ইসি যদি ২৩ জানুয়ারিতেও গেজেট প্রকাশ করত, তাহলে ২৫ জানুয়ারিতেই শপথ পড়ানো সম্ভব ছিল। বহুল উচ্চারিত ‘সংবিধান রক্ষার’ জন্য তারা ১৫ দিন সময় অপেক্ষা করতে পারেনি।
এর আগে ২৪ জানুয়ারির পর নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের চিন্তাভাবনা ছিল। এখন ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিদ্যমান পরিস্থিতির’ কথা বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ে শপথ গ্রহণ করা হচ্ছে। পত্রিকায় এসেছে, গত সোমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে শপথের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, রাষ্ট্রপতি সংবিধান ভঙ্গ করার সভায় পৌরোহিত্য করেছেন।
শাসকগণ প্রমাণ দিচ্ছেন, মাত্র ১৫ দিন বিলম্বের চেয়ে সংবিধান ভাঙা অনেক সহজ। অথচ এঁরাই সংবিধানের কোনো বিচ্যুতি ঘটালেও বিরাট শাস্তির বিধান করেছেন।
শাসকেরা চাইলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে ১২৩ অনুচ্ছেদের ওই শর্তাংশ মুছে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তাতে বদনাম হবে। লোকে ধরে ফেলবে। সংবিধানে সংশোধনী আনা বদনামের। কিন্তু তাকে দলিতকরণ দোষণীয় বা দণ্ডনীয় নয়। লোকে ধরতে পারবে না। আমরা তথাকথিত সাংবিধানিক শাসনে কতটা আছি, এটা তার আরেকটি প্রমাণ।
রকিব কমিশন সংবিধান ভাঙল। শপথ পড়ালে স্পিকারও তার ভাগীদার হবেন। এখন দেখতে হবে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হতে শেখ হাসিনাকে কবে কখন আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি এটা করলে তাঁর তরফে একটি নির্দিষ্ট সাংবিধানিক বিচ্যুতি ঘটানো হবে। তিনি যদি সরকার করার আমন্ত্রণ জানাতে আরও ১৫ দিন সময় নেন, তাহলে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ বেঁচে যাবে। আমরা বুঝতে অপারগ থাকব, নবম সংসদের সত্তা মাঘের কুয়াশায় মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত কী করে তিনি দশম সংসদ ডাকবেন।
২৪ জানুয়ারির আগে রাষ্ট্রপতি দশম সংসদের কোনো সদস্যকে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বৈধভাবে নিয়োগ দিতে পারেন না। কারণ সংবিধানের ৫৬(৩) অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।’ কিন্তু সংবিধানমতে আমি তো ২৪ জানুয়ারির আগে কার্যভার গ্রহণ-উপযোগী কোনো ‘সংসদ সদস্য’ দেখি না। সংবিধানবহির্ভূত শপথ আইনের চোখে বৈধ শপথ হবে না। তাই রাষ্ট্রপতি তাঁদেরকে সরকার গড়তে আহ্বান জানাতে বাধ্য নন। শুনেছি, রাষ্ট্রপতি সঠিক পরামর্শ দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
এখন রাষ্ট্রপতি যদি ২৪ জানুয়ারির আগে দশম সংসদের কোনো সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হতে আমন্ত্রণ জানান, তাহলে তিনি সংবিধানের ১২৩ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন। রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সংবিধান কল্পনা করেছিল। তাই ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকতে কোনো কিছুই অযোগ্য করবে না।’
আসলে ভয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ দলটি এখন তাদের লব্ধ ‘বিজয়’ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত। তাই সংবিধানের এমন শক্তিশালী রক্ষাকবচ সত্ত্বেও কখন কী হয় এ প্রশ্ন তাদের তাড়া করে ফিরছে।
বস্তুত তাঁরা রাজার ইচ্ছা পূরণ করছেন। সংবিধানবিচ্যুত হয়ে সংবিধান রক্ষণের শপথ আজ। এই রাষ্ট্রে কার কাছে এর প্রতিকার চাইব?



মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com